• ঢাকা
  • |
  • সোমবার ১২ই কার্তিক ১৪৩২ সন্ধ্যা ০৬:৫৬:৪০ (27-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:

দুই শিক্ষার্থীসহ পাঁচজনের মাথা ন্যাড়া করলেন ইউপি সদস্য

২৭ অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ০৩:৫৩:৪৬

সংবাদ ছবি

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নে এক তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছেন স্থানীয় এক ইউপি সদস্য। তার নির্দেশে এবং উপস্থিতিতেই দুই শিক্ষার্থীসহ পাঁচ তরুণের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

২৬ অক্টোবর রোববার সকাল ১০টার দিকে ওই ইউনিয়নের মধ্য চতলাখালী গ্রামে প্রায় শতাধিক মানুষের সামনে এমন ঘটনা ঘটে।

Ad
Ad

অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফা।

Ad

স্থানীয়দের অভিযোগ, তার সিদ্ধান্তেই এ ‘শাস্তি’ কার্যকর করা হয়। এর প্রমাণও পেয়েছে। লাঠি হাতে রেশাদ খলিফা দাঁড়িয়ে ছিলেন, আর নাপিত মাথা ন্যাড়া করছিলেন এমন একটি ভিডিও হাতে এসেছে প্রতিবেদকের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে মাথা ন্যাড়া করা চুলগুলো পড়ে আছে সেখানে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মধ্য চতলাখালী গ্রামের মনির গোলদার ও মোজাম্মেল মৃধার মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এনিয়ে শুক্রবার দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং হাতাহাতি হয়। এসময় বাবার সঙ্গে মিলে মনিরকে লাঞ্ছিত করেন মোজাম্মেলের ছেলে রিয়ানও।  এই জেরে শনিবার রাতে মনির গোলদারের ছেলে রাব্বি ও মোজাম্মেলের ছেলে রিয়ান তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে রাব্বি রিয়ানকে মারধর করেন।

পরে রিয়ানকে মারধরের ঘটনাটি তার বাবা মোজাম্মেল স্থানীয় ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফাকে জানান। পরদিন রোববার সকালে ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার উপস্থিতিতে মধ্য চতলাখালীর খুতির বাজার এলাকায় শালিস বসে। সেখানে দুই পক্ষসহ স্থানীয় লোকজনকে ডেকে এনে তিনি পাঁচ তরুণকে বখাটে আখ্যা দিয়ে মাথা ন্যাড়া করার নির্দেশ দেন। একপর্যায় নিজেই নাপিত ডেকে এনে নিজে উপস্থিত থেকে মাথা ন্যাড়া করান।  

যাদের মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে, তারা হলেন রাব্বি ১৮ (কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র), রিয়ান ২১ (গৃহস্থালি কাজে নিয়োজিত), রাতুল ১৭ (মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী), শাকিল ১৯ (গৃহস্থালি শ্রমিক) ও নয়ন সরদার ১৮ (রাজমিস্ত্রির সহকারী)। তারা অভিযোগ করেছেন, রাব্বি ও রিয়ানের মারামারি থামাতে গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু শালিস বৈঠকে তাদের সবার মাথা ন্যাড়া করা হয় প্রকাশ্যে।

মাথ্যা ন্যাড়া হওয়া ভুক্তভোগী নয়ন সরদার বলেন, ‘আমাদের অপরাধ আমরা রাব্বি ও রিয়ানের মারামারি থামিয়েছি। একারণে সকালে মেম্বার আমাকে ফোন দিয়ে ডেকে নিয়েছে। গিয়ে দেখি বাজার থেকে নাপিত ডেকে নিয়েছে। ওই নাপিত দেখি দুইজনের মাথা ন্যাড়া করে দিছে। পরে আমাকেও মাথা ন্যাড়া করে দেয়। আমি অনুরোধ করেছি, মেম্বার আমার কথা শোনেনি। খবর পেয়ে আমার আম্মু গেছে। গিয়ে জিজ্ঞেস করছে আমার ছেলের চুল কে কাটছে মেম্বার বলছে আমি কাটছি।’

ছেলের অপমানের ঘটনার বর্ণণা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে নয়ন সরদারের মা ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘আমি মানুষের কাছে এসমস্ত ঘটনা শুনে গেছি। আমি অভিভাবক, আমিতো আছি। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করলে আমাকে ডাকতো। সেতো কোনো অপরাধ করেনি। মারামারি দেখে থামিয়েছে। মেম্বারকে বলছি বিনা অপরাধে আমার ছেলের মাথা কে কামিয়েছেন? বলছে আমি পারছি, কামাইছি। পাঁচজনের কামাইছি।’    

মাথা ন্যাড়া করে অপমানের শিকার আরেক জন হলেন রাব্বি। তিনি বলেন, ‘রিয়ান ভাইর সঙ্গে আমার মারামারি হয়েছে। স্থানীয় রেশাদ মেম্বার (ইউপি সদস্য) এসে চৌরাস্তায় (খুতির বাজার) সালিশ করে দিছে। ওর (রিয়ান) এবং আমারসহ পাঁচজনের চুল কেটে দিছে। ওরা (তিনজন) মারেনি, ওদেরও চুল কেটে দিছে।’

রাব্বির মা মাহফুজা বলেন, ‘জমিজমা ঝামেলা নিয়ে রাব্বির বাবাকে মারধর করেছে রিয়ান ও তার বাবা। এটা কোনো ছেলে মেনে নিতে পারে? তাই রিয়ানকে এই কথা জিজ্ঞস করতে গিয়ে মারামারি হয়েছে। সেটা নিয়ে রেশাদ মেম্বার সবার চুল কেটে দিছে।’

এ প্রসঙ্গে রিয়ানের বাবা মোজাম্মেল মৃধা বলেন, ‘রাব্বির বাবা মনিরের সঙ্গে আমার যে সমস্যা হয়েছিল, তা মিটমাট হয়ে গেছে। তারপর মনিরের ছেলে এসে আমার ছেলেকে মারধর করছে। আমার ছেলেকে চার-পাঁচজনে মিলে মারছে। আমি মেম্বারের কাছে বিচার চাইছি। মেম্বার এসে বিচার করে দিছে। মাফ চাওয়াইছে। আর আমার ছেলেসহ সবার চুল কেটে দিছে।’

ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার নির্দেশে চুল কাটা সেলুনের মালিক স্বপন শীল বলেন, ‘আমারে রেশাদ খলিফা ডাক দিয়ে নিছে। জিরো মেশিন নিয়ে যেতে বলছে। ওদের চুল কেটে দেওয়ার জন্য।  তখন তাদের পরিবারের লোকজনও উপস্থিত ছিলেন।’

ঘটনার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক পরিবার অপমানের লজ্জায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। কিন্তু ইউপি সদস্য প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কেউ  বিষয়টি নিয়ে ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।  

স্থানীয়রা বলছেন, কেউ অপরাধ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। এক নারী বলেন, আইন রক্ষার দায়িত্ব যাদের হাতে, তারাই যদি আইন হাতে তুলে নেন-তাহলে মানুষ কোথায় ন্যায়বিচার চাইবে?

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি জানি না। আমি ছিলাম না। বিষয়টি আমি শুনি নাই।’

গ্রাম আদালতের উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মো. ইমাম হোসেন সায়েম বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের বাহিরে সালিশ করার সুযোগ নেই। আর সালিশের নামে যে ঘটনাটি শুনেছি, সেটি সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত কাজ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির এমন ক্ষমতা নেই।’ 

রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হাওলাদার বলেন, বিষয়টি শুনেছি। খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ






সংবাদ ছবি
কুমারখালীতে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা
২৭ অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ০৫:৪২:১৮






Follow Us